মোটিভেশনাল লেখক মোঃ মামুন ফেরদৌস এর ‘যদি বিবেক জাগ্রত হয়’ নামক বইটি আদ্যোপান্ত পড়ে উদ্দীপ্ত হয়েছি। মোটিভেশনাল লেখায় তিনি স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন বলে মনে করি। কারণ, এই ধারার লেখকগণ সাধারণত ব্যক্তিকে সক্রিয় করে সফলতার মসনদ ছোঁয়ার মণ্ত্রণায় উজ্জীবিত করে থাকেন। কর্ম সাধনের চাবিকাঠি যেন ব্যক্তির সফল প্রয়াস মাত্র।
ঘুম থেকে জেগে শুধু ফু দিলেই যেন জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। তাই তারা পাঠককে ফু দেয়ার মন্ত্রণাতেই সচেষ্ট থাকার পরামর্শ দিয়ে কর্তব্য সারেন। সেখানে যেন মহান স্রষ্টার কোনই দায় ভার নেই। কিন্তু অনেক সাধনার পরেও যারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় তাদের সমীকরণে বেশির ভাগ মোটিভেশানল লেখকরা চুপ থাকেন। ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে অনেকেই হতাশার সাগরে হাবুডুবু খান-ডিপ্রেশনে ভোগেন। সেখানে মামুন ফেরাদাউস দেখান তাদের আশার আলো। তিনি লেখেন, “যখন সব আশা হারিয়ে ফেলেন তখন তিনিই (আল্লাহ) আপনাকে তুলে আনেন।”
“আপনার জীবনে যাই ঘটুক না কেন,তা সর্বশক্তিমানের পরিকল্পনার একটি অংশ।” এভাবে লেখক তার ‘যদি বিবেক জাগ্রত হয়’ বইয়ের ৪৩টি বিষয় শিরোনামের মধ্যে একটি বাদে বাকী সব কয়টিতে আত্ম উন্নয়ন এবং মোটিভেশনাল লেখায় সমৃদ্ধ করেছেন। যার প্রতিটিতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি পরম আস্থা -বিশ্বাস আর ভরসার স্থলকে উচ্চকিত করে কর্ম প্রবাহ চালিয়ে নেওয়ার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন। “আসলে জীবন কিন্তু অন্যকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য নয়,নিজকে টেনে তোলার জন্যই”
“জীবনের অনেক কিছুই প্রয়োজন,তবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোন কিছুই অপরিহার্য নয়।” “সফল ব্যক্তিরা মাঝে মাজে ব্যর্থ হয়। কিন্তু শিক্ষিত ব্যক্তিরা কখনো অশিক্ষিত হয় না।” পৃথিবীর একটি সহজ কাজ হচ্ছে অন্যকে বোকা বানানো।” কেউ আপনাকে বোকা বানিয়ে নিজেকে জয়ী করতে চায়? -তো হেরে গিয়ে তাকে জিতিয়ে দিন। দেখবেন সে ঠিকই হেরে গেছে।” উপর্যুক্ত মোটিভেশনাল উক্তিগুলোই সাক্ষ্য দেয় মামুন ফেরদৌস একজন প্রতিশ্রুতিশীল আত্ম উন্নয়ন এবং মোটিভেশনাল লেখক। আমাদের দেশীয় মোটিভেশনাল লেখকদের মধ্যে যার নাম সবার আগে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা যায় তিনি হলেন ডাক্তার লুৎফর রহমান। বেদেশীদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় লেখক ডেল কার্নেগি। পৃথিবীতে এমন শিক্ষিত মানুষ পাওয়া বিরল যিনি তাঁর লেখা বই পড়ে উদ্দীপ্ত হননি।
এছাড়া Doctor Norman Vincat Pil, Poulo Coelho, ব্রায়নটেসি, উইংস অব ফায়ার গ্রন্থের লেখক- এপিজে আব্দুল কালাম, আনিস কবির ও অহিদ তুষার প্রমুখ মোটিভেশনাল লেখকদের মূল বক্তব্য প্রায় একই। সেখানে উদ্দীপনা আছে কিন্তু নীতি-নৈতিকতা প্রশ্ন সাপেক্ষ। দুণিয়ার রশদ সংগ্রহের চেতনা সোচ্চার কিন্তু আখিরাত উপেক্ষিত। এখানেই লেখক মামুন ফেরদৌস সাহেবের সার্থকতা। তার শব্দ প্রয়োগ সহজ কিন্তু বচন গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাখ্যা তুল্য। এটি লেখকের প্রথম বই। তাই অভিজ্ঞতার অভাবজনিত কারণে কিছু পরিমার্জনের ত্রুটি থাকলেও পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লেখক। মানানসই চার রঙা প্রচ্ছদটি করেছেন অরূপ মান্দি। ISBN প্রাপ্ত বইটির কম্পোজ করেছে রাবেয়া কম্পিউটার এন্ড গ্রাফিকস। মূদ্রণে রয়েছে : সামির প্রেস। বোর্ড বাইন্ডিং অপসেট কাগজের ছাপানো পাঁচ ফরমার বইটি ৩৮, বাংলা বাজার, শব্দ শিল্প প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। পৃষ্ঠা-৮৫, মৃূল্য- ২৫০ টাকা। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।
লেখক-
কামাল সিদ্দিকী
প্রাবন্ধিক কবি ও কলামিস্ট
স্থান- ২নং নয়া নগর, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...