চাই মাগো রাজা হতে!!
  1. rakibchowdhury877@gmail.com : Narayanganjer Kagoj : Narayanganjer Kagoj
  2. admin@narayanganjerkagoj.com : Narayanganjer Kagoj : Narayanganjer Kagoj
চাই মাগো রাজা হতে!!
সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সিদ্ধিরগঞ্জ ৭নং ওয়ার্ডের আলোচনা সভায় শরীফ হোসেনের নেতৃত্বে যোগদান ফতুল্লায় শীতার্তদের মাঝে চাদর ও কম্বল বিতরণ শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করলো ‘ট্রাস্ট’ রনির শীতবস্ত্র উপহার নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে যুবদল-ছাত্রদল দাম্পত্য কলহে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কাটলেন দ্বিতীয় স্ত্রী আড়াইহাজারে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবক নিহত ডিবির অভিযানে ৪৬ বোতল ফেন্সিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনের মৃত্যু, ফতুল্লা প্রেসক্লাবের শোক দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন আর নেই না’গঞ্জে থানা ও ফাঁড়ির ১০ ইন্সপেক্টরদের রদবদল আমলাপাড়ায় ব্যবসায়ীর ছেলের কাছে চাঁদা দাবি ও মারধর তরুণরা আগামীতে আমাদের পথপ্রদর্শন করবে : প্রধান উপদেষ্টা রূপগঞ্জে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় পথচারীসহ নিহত ৩ নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষকদলের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ফতুল্লায় কিশোরী ধর্ষণ, অভিযুক্ত যুবক গ্রেপ্তার

চাই মাগো রাজা হতে!!

নারায়ণগঞ্জের কাগজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২
চাই মাগো রাজা হতে!!

রণজিৎ মোদক : সেই অনেকদিন স্কুলজীবনে আমি আমার বাবার সাথে যাত্রা গান শুনতে গিয়েছিলাম টাঙ্গাইল জেলার দৌলতপুর গ্রামের কর্মকার পাড়ায় যাত্রাপালাটি ছিল ‘ভক্ত রামপ্রসাদ’। রামপ্রসাদের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন নারান্দিয়া গ্রামের ভবেষ বসু। সবাই তাকে ভব বোষ বলে ডাকতেন। যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনি ছিল তার মধুর কন্ঠ। তার কন্ঠের একটি গানের কলি আমার মাঝে মাঝেই মনে পরে। ‘চাই না মাগো রাজা হতে- সামান্য ধন দেবে তারা, পড়ে রবে ঘরের কোণে।’ কাজের ফাঁকে ফাঁকে গুনগুনিয়ে আমার বাবাও এই গানটি গাইতেন। বাবা আমার শিল্পী ছিলেন না সত্য। কিন্তু তিনি একজন সৎ ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। এ কথাগুলো শুধু আমার নয়। গ্রামের সবাই বাবাকে জানেন। তারাই বলতেন।

আজ আমার বাবা বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর শুকাবো আমার স্মৃতির পটে ভেসে উঠে। ভাবি আমি আমার বাবার মতো সব ধর্মপ্রাণ হতে পারছে কি? আমি আমার কথা দিয়েই বলছি। আপনি আপনার অংক মিলিয়ে নিন। পুরানো মানুষগুলো এক এক করে অসীমের ঠিকানায় চলে যাচ্ছে। আমি আপনি সবাই একদিন চলে যাব সত্য। এই চির সত্যটা জেনেও আমরা অজ্ঞের মত কাজ করছি। শেষ দিনের সেই সম্বল না করে। জড় জগতের সম্পদের পাহাড় গড়ায় ব্যস্ত হয়ে পরেছি। এই সম্পদ নিয়ে কেউ যেতে পারেনি। ইতিহাস বলছে, স¤্রাট আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ জয় করে বহু সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। ধনকুবের জগৎ শ্রেষ্ঠ শূন্য হাতে বিদায় নিয়েছেন। আলেকজান্ডার বলেছিলেন, তাঁর প্রিয় সেনাপতিকে ‘আমি মারা গেলে আমার লাশ বহন করবে ডাক্তাররা আর হাত দুখানা বাইরে রাখবে।’ সেনাপতি প্রশ্ন করেছিলেন এর অর্থ কি স¤্রাট? ‘ডাক্তাররা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আমাকে বাঁচাতে পারেনি। আর বিশাল সম্পদ আমি রেখে গেলাম। শব যাত্রায় সেই সম্পদ দুহাতে ছিটিয়ে দিবে। দিন দুঃখিরা কুড়ায়ে নিবে- এ আমার শেষ আশা।’ ইতিহাস থেকে আমরা কেউ কোন শিক্ষা গ্রহণ করি না। আমরা সবাই ধর্মভীরু ধার্মিক জাতি। ধর্মগ্রন্থ পড়ি তা থেকে অনেকেই তা আমল করছি না। আমরা যদি ধর্মাধর্মের বিধি-বিধান মেনে চলতাম এ পৃথিবী সত্যিই শান্তি নিবাস হতো। আমরা কেউ যজ্ঞ করে যজ্ঞের শান্তির ফোঁটা কপালে ধারণ করি। আবার ব্রাহ্মণের পড়া শান্তির জল গৃহে ছিটিয়ে ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি বলি। কিন্তু কর গুনে দেখুন অনেকটাই যেন কুরুক্ষেত্রের মাঠ হয়ে রয়েছে। শান্তি কোথায়? এ কথা বলছি কেন? আমি সেই দ্বাপর যুগের কৌরব এবং পান্ডবদের যুদ্ধ স্থান কুরুক্ষেত্রে গিয়েছিলাম। বিরাট মাঠ পড়ে রয়েছে। কোথায় অহংকারি কৌরব? কোথায় সেই পান্ডু পুত্রগণ পান্ডব? কেউ নেই, যুদ্ধও নেই। যুদ্ধ এখন অনেকের ঘরে ঘরে চলছে। অনেকের পঞ্চভূতের দেহবিশিষ্ট হৃদয়ের মাঝে যুদ্ধ চলছে। সত্য ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধ। এই সত্য-অসত্যের যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্যই এত আয়োজন এত সাধনা। দুঃখের বিষয় পৃথিবীর সর্বত্র চলছে আধিপত্যের স্নায়ু যুদ্ধ।

পবিত্র রমজান মাস চলছে এই মাসটির প্রতীক্ষায় সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ কোটি কোটি মানুষ সংযমের মাধ্যমে ¯্রষ্টার রহমত কামনা করেন। এ সকল পবিত্র মানুষগুলোর সেবা করাও সুন্নত। সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরা তাদের সেবা দানের মাধ্যমে আল্লাহ ও নবী রাসুলের রহমত লাভ করেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার লেখায় খুব দুঃখ করে বলেছেন, ‘জাতীয় এবং ধর্মীয় দিবস উপলক্ষে অন্যান্য দেশে তাদের দেশের পণ্যসামগ্রীর মূল্য হ্রাস করেন। যাতে ধনী-দরিদ্র সবাই তা ভোগ করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে তার উল্টো দৃশ্য দেখতে হচ্ছে। মোনাফেক ব্যবসায়ী মহল এ দিবসগুলোতে ওঁৎ পেতে থাকেন। যে দেশে শতকরা ৯৫ জন মুসলমান সে দেশে রমজান-ঈদ উপলক্ষে ভোগ্য পণ্যের মূল্য কম থাকার কথা। সরকার ভর্তুকি দিয়ে এক কোটি পরিবারের মাঝে নিত্যদ্রব্য বিতরণ করছে। সরকার জনগণের সরকার, জনগণের সম্পদ মানে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিলানো হচ্ছে। ১৬ কোটি মানুষ ইচ্ছা করলে ১ কোটি মানুষকে নিজেরাই তাদের সম্পদের অংশ বিলিয়ে সেবা দান করতে পারেন। দান করলে গুনাহ মাফ হয়। পবিত্র ইসলাম ধর্মে যাকাত প্রথার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু সামর্থ্যবান পরিবার ব্যক্তিবর্গ কি নিয়মমাফিক যাকাত প্রদান করেন? যদি সঠিকভাবে এই যাকাত রাষ্ট্রীয় তহবিলে জমা হতো তবে এদেশে দারিদ্র সংখ্যা আরও লোপ পেতো।

আপনি চোখ বুজে একটু চিন্তা করুন। এই সরকারকে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাড়তি বোঝার ভার গ্রহণ করতে হচ্ছে। তাছাড়া ৬০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে আবাস গৃহ নির্মাণ করে তাদের আশ্রয়দান করে দিয়েছেন। শিক্ষালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ যুগান্তকারী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। আধুনিক চিকিৎসা সেবা রাষ্ট্রীয় প্রবৃদ্ধি উন্নত অবস্থানে রয়েছে।

আজ সরকারকে আইন করে খাদ্যদ্রব্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। দেশের ব্যবসায়ী মহলের ৯০ ভাগই সরকারি লোক। কোনো-না-কোনোভাবে সরকারি লোকের নাম বিক্রি করে হোক আর আত্মীয় পরিচয়ে হোক রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। তারা আজ গান গাইছে ‘চাই মাগো রাজা হতে’। সরকারি সেবাদান প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সবাই যেন রামপ্রসাদের শ্যামা সঙ্গীতের প্যারোডি গান গাইছে, ‘চাই মাগো রাজা হতে’। রাজা হওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। মহাভারতের ধর্মরাজ বলেছিলেন, অঋনী, অপ্রবাসী, দিনান্তে শাক অন্ন খায় সেই সুখী। সবাই আজ রাজা হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। তাই সুখ-শান্তি সমাজ থেকে আজ হারিয়ে যাচ্ছে।

লেখক –
রণজিৎ মোদক
শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
সাবেক সভাপতি, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।

নিউজটি শেয়ার করুন :

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..