হাইকোর্ট থেকে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশই সয়লাব। নারায়ণগঞ্জে এসব চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। ক্ষমতাসীন কিছু রাজনৈতিক নেতা,কথিত নামধারী সাংবাদিক এই সিন্ডিকেটের হোতা। তারা প্রতিদিন কোটি টাকা চাঁদা তুলছে। এই চাঁদার টাকায় যাদের নূন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের অনেকেই বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছেন। এই সিন্ডিকেটের বদৌলতে বিদ্যুতের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও পুলিশের পেটেও যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার নিষিদ্ধ এসব যান বন্ধ করার কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর কয়েক দিন প্রশাসন সাময়িক সময়ের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করলেও দুই-তিন দিন পর আবার পুরাতন অবস্থায় ফিরে আসে। অন্যদিকে এই সুযোগে দিন দিন এসব অবৈধ যানের সংখ্যা বেড়েই চলছে শহরে। যার ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি আর চাঁদাবাজদের সিন্ডিকেট। সাথে পরিবহন সেক্টরের বিশৃঙ্খলা-তো আছেই।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে এই অবৈধ যানবাহনের সয়লাব। কয়েক হাজার এই তিন চাকার অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুক দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর ফলে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কগুলোতে দুই মিনিট পর পর যানজটের সম্মূখীন হতে হচ্ছে যাত্রীদের। সেই সাথে এই অবৈধ যানবাহনের জন্য পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্ট্যান্ড। এই অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুকের অধিকাংশ আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, নামধারী কথিত সাংবাদিকদের নাম ও স্টিকারের নামেই দিব্ব্যি চলাফেলা করছে ট্রাফিক পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় শহর সহ লিংকরোড ও হাইওয়ে রোডে এবং বিভিন্ন অলিগলিতে।অন্যদিকে স্টিকার না অধিকাংশ ব্যাটারিচালিত অটো-মিশুকের চালকের পুলিশ ধরলেই তারা বের করছে সাংবাদিকদের কার্ড। আবার অনেকেই কার্ড করেও দেওয়া হয়েছে যাতে পুলিশ ধরলে দেখালেই সাথে সাথে ছেড়ে দেয়। গণপরিবহনের সাথে প্রধান সড়কগুলোতে এই অবৈধ যান পাল্লা দিয়ে দ্রুত বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব যানবাহনের মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের ট্রাফিক বিভাগ কঠোর অবস্থানে না থাকায় এবং নির্দিষ্ট কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এই সব অবৈধ যানের চালক, মালিক ও কথিত নামধারী স্টিকার প্রদানকারী সাংবাদিকরা।
স্থানীয় জনগণ বলছে, করোনা মহামারির আগে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো-মিশুক নারায়ণগঞ্জ জেলার গলিতে চলত। কিন্তু করোনা আসার পর গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবার পর প্রধান প্রধান সড়কে বেপরোয়া গতিতে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন এই বাহনে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। শুধু তাই নয়, আইনের তোয়াক্কা না করেই শহরে দিন দিন ভয়ঙ্কর আকারে বেড়েই চলছে তিন চাকার ওই বাহনটি। এতে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই নিরুপায় হয়ে ওই বাহনে মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছেন।
সূত্র মাধ্যমে জানা যায়, এই সব অটো-মিশুক ও অটোরিকশা গুলোতে শহরের বেশ কিছু নামে বেনামে ও জেলার বাহিরের বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের স্টিকার লাগানো। আর এই স্টিকার গুলোর জন্য প্রতিটি অটো,অটোরিকশা ও মিশুককে দিতে হচ্ছে এককালীন সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতিটি গাড়ীর জন্য মাসিক দিতে হয় আরো ১৫০০-২৫০০ টাকা। এই এককালীন ও মাসিক টাকা আবার ভাগ হচ্ছে দুই ভাগে। এক ভাগ যাচ্ছে কথিত সাংবাদিকদের পকেটে অন্য ভাগ যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবুল বাশারের পকেটে।
স্টিকার ছাড়া গাড়ী গুলো আবার মাসিক চুক্তিও হচ্ছে সেই কথিত সাংবাদিকদের সহযোগিতায় কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার সাথে। এছাড়াও চাষাড়া শহরমুখী আসা স্টিকার ছাড়া গাড়ী দুই বেলা করে সকাল ৮টায় দিতে হচ্ছে ৫০টাকা ও দুপুরে জন্য ১২টায় দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। দিনে মোট ১০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে ২নং রেলগেইট ও ফলপট্টিতেও আলাদা আলাদা করে সকাল ৮টায় ও দুপুর ১২টায় ২০ টাকা করে ৪০ টাকা দিতে হয় পুলিশ সদস্যকে এবং এই অটো-মিশুক গুলোকে আবার শহরে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন রেকারের কর্মকর্তাকে মাসিক ২হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।
সাংবাদিকদের স্টিকার ব্যবহৃত অটো-মিশুক গাড়ীর চালকরাও নির্ভয়ে শহরে যাত্রী নিয়ে দিব্ব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের শহরে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও কেনো শহরে ঢুকছে জানতে চাইলে বেশ কিছু অটো ও মিশুক চালকরা জানায়,আমরা প্রতি মাসে টাকা দেই। আর পুলিশের থেকে বড় যে বাপ আছে তাদেরকেই টাকা দেই। আমাদের যদি ধরে একটা ফোন দিলেই তারা সাথে সাথে আমাদের ছেড়ে দেয়। টাকা যেহেতু দিচ্ছি তাহলে শহরে ডুকবো না কেনো। টাকা কি এমনে এমনেই দেই।
ট্রাফিক পুলিশের এডমিন ইন্সপেক্টর একে করিম এ বিষয়ে বলেন,অপরাধ কখনো নির্মূল হয় না কিন্তু নিয়ন্ত্রন আছে। নারী নির্যাতন নির্মূল আইন আছে ? নেই কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা যানজট নির্মূল করতে পারবো না চেষ্টা করছি যানজট নিয়ন্ত্রনে। এতটুকু তো আমরা করতেই পারি তাদের জন্য। এই মাসে মোবাইল কোর্ট হয়েছে, কয়জন ম্যাজিস্ট্রেট এসেছে এই অটো-মিশুক-ব্যাটারিচালিত রিকশা দমনে? আমাদের কাজ যানজট নিরসনে। আমরা সেটাই করছি।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...