নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, যারা সব সময় আলোচনায় থাকেন, তাদের বেশীরভাগই বসবাস করেন ঢাকায়। প্রতিদিন ঢাকা থেকে গাড়ি হাকিয়েই আসেন নারায়ণগঞ্জ। নিজেদের ধান্ধা করে চলে যান ঢাকায়। নিয়ন্ত্রণ করেন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা তো বটেই খোদ এমপিরাও থাকেন এলাকার বাইরে। তাদের সবার নিবাস এখন রাজধানীতে।

নারায়ণগঞ্জবাসীর মতে, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক ও এমপিরা যদি নারায়ণগঞ্জ থাকতেন তাহলে এখানকার উনয়নে আরো বদলে যেত দৃশ্যপট। নিয়মিত যানজট যন্ত্রনা, আধুনিক জীবন যাপনে বাধার সম্মুখীন হলেই কেবল আরো উন্নয়ন ঘটতো রাজধানী নিকটবর্তী এ জেলার।

নারায়ণগঞ্জের লোকজনের কেনাকাটার কোন প্রয়োজন হলেই কষ্ট করে যেতে হয় বসুন্ধরা শপিং মলে, যুমনা ফিউচার পার্কে কিংবা নিউ মার্কেটে এছাড়া শপিং করতে ঢাকার বৃহৎ মার্কেটের পাশাপাশি এলিফেন্ট রোডের দোকানগুলোতে ঢু মারেন নারায়ণগঞ্জের লোকজন। অথচ যেসব রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরা ঢাকাতে বসবাস করেন তাদের পক্ষে ওইসব স্থানে যাওয়াটা খুবই সহজ বিষয়।

শহরের অনেকেই বলছেন, ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্রীক নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়ন হলেও অনেক ক্ষেত্রেই ঘটেনি কোন উন্নয়ন। বরং অবহেলিত রয়ে গেছে এ জনপদ। এক সময়ে নারায়ণগঞ্জের সরকারী তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই উঠে আসে এখানকার অনেক রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু এখন তাঁদের সন্তানদের দেখা মেলে না এসব প্রতিষ্ঠানে। বরং গাড়ি হাকিয়ে ঢাকাতেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে তাদের অধ্যয়ন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে। ফতুল্লার দাপায় তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন। শহরের উত্তর চাষাঢ়া এলাকাতে রয়েছে নিজ বাসা। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর শহরের চাষাঢ়ায় সেলিম ওসমানের বাড়িতে গুলি বর্ষণের পর থেকেই তিনি ঢাকাতে বসবাস করছেন। চাষাঢ়াতে পৈতৃক নিবাস থাকলেও সেখানে পরিবারের কাউকে বসবাস করতে দেখা যায়নি। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতে। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা অবশ্য একটু ব্যতিক্রম। তিনি থাকেন নারায়ণগঞ্জ শহরের আমলাপাড়া এলাকাতে। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর আড়াইহাজারে বাসা থাকলেও বসবাস করেন ঢাকাতে। একই অবস্থা নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর ক্ষেত্রেও, তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী তিনি নারায়ণগঞ্জেই বসবাস করেন।

এছাড়া রাজনীতিকদের মধ্যেও রয়েছে ঢাকায় থাকার প্রবণতা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল থাকেন উত্তরাতে। রাজধানীতে থাকেন তাঁর ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন সাজনু যিনি নারায়ণগঞ্জ শহর যুবলীগের সভাপতি। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম স্ব-পরিবারে থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে।

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান যিনি ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি থাকেন ঢাকাতে।

এদিকে বিএনপির নেতারাও এখন ঢাকামুখী। জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সপরিবারে থাকেন ঢাকাতে। ব্যবসায়ী নেতা ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোঃ শাহ আলম, জেলা যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন থাকেন ঢাকাতে। কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু থাকেন ঢাকাতে।