নারায়ণগঞ্জ নাট্যাঙ্গনে ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে ছিলেন উজ্জল নক্ষত্র নাজমা বেগম, নাটক কিংবা সংগীত অঙ্গনে এবং নৃত্যে তার শৈল্পিক প্রতিভা বিকশিত না হলেও তিনি ছিলেন এ অঙ্গনের পুরোধা। প্রতিটি অঙ্গনের লোকালয়ে ছিল তার সরব উপস্থিতি।
দিক নির্দেশনা ও সাফল্য বর্ত্তিকা ছড়াতে সবার সাথে ছিল তার আত্মার সম্পর্ক। তাইতো ফতুল্লা থিয়েটারের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে অসীন থেকেও নারায়ণগঞ্জ জেলা নাট্যশিল্পী কল্যাণ সমিতির আজীবন সদস্য হয়ে নৃত্যাঙ্গনে আর্ট গ্যালারী অথবা বৈশাখী সংগীত একাডেমীর পৃষ্ঠপোষকতায় আমরণ সম্পৃক্ত থেকেছেন জীবদ্দশায়।
নাজমা একটি প্রতিভা একজন সংগঠক একজন পুরোধা প্রতিথযশা সাংস্কৃতিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব। মহান বিজয় দিবসের ২৩ দিবসে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। নাজমা বেগম চলে যাওয়ার আজ চার বছর। সে তার কর্মগুনে নাট্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের কাছে বেঁচে থাকবেন যুগ থেকে যুগান্তর। সব মৃত্যু চলে যাওয়া নয়।
কীর্তি ধন্যদের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য শতভাগ। মৃত্যুর মধ্যদিয়ে তাদের শরীরের প্রস্থান ঘটলেও কর্ম তাদের বাঁচিয়ে রাখে মানুষের হৃদয় মন্দিরে। একজন উচু মাপের বড় মানের নাট্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বের মহা প্রস্থান মেনে নিতে কষ্ট হয়। তারপরও জন্ম মানেই মৃত্যু অনিবার্য তার চলে যাওয়া মানে একটি নক্ষত্রের পতন, যে শূন্যতা নারায়ণগঞ্জ নাট্য ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের অপূরনীয় । তার পথ ধরে চলে গেছেন ও আর লিটন, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, মোস্তাফিজ, হাবিবুর রহমান হাবিব, শাহজালাল মেম্বার, হানিফ দেওয়ান, নাজিম, বাবলা, রফিউদ্দিন বাবু, আশরাফ রানা, ববি খান এবং কবি আমজাদ হোসেন, সেই খেয়াপাড়ের শেষ যাত্রী ছিলেন বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী সুমনা আক্তার।
নারায়ণগঞ্জের প্রাজ্ঞজনের একজন ছিলেন নাজমা বেগম। ব্যক্তি জীবনে হাস্যউজ্জল সদালাপী, ব্যক্তিত্বমান মানুষ ছিলেন তিনি। কিংবদন্তি এ মানুষটির সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। একজন অসাধারন মানুষই শুধু নয়। উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মানবিক। তার ব্যবহার আর কাজ অনন্য।
সৃষ্টি কর্তাকে বলবো…. নাজমা যেখানেই থাকুক তাকে যেন শান্তিতে রাখে।
একে একে সবাই চলে যাছে নারায়ণগঞ্জ নাট্যাঙ্গনটা অসীম শূন্যতায় ভরে যাচ্ছে। এ শূন্যতা কখনো পূরণ করার নয়। নাজমার মত একজন কর্মদক্ষ মানুষের আরও অনেক দিন বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল।
আপন কীর্তির মাঝে মহিমান্বিত হয়ে ওঠে কিছু মানুষ। তেমনি প্রচলিত অর্থে নাজমাদের মৃত্যু হয় না। শেষ পর্যন্ত তার জীবন ঘড়ি থেমে গেল। বহুকাল পর্যন্ত চিরঞ্জিব হয়ে থাকবে তার সৃষ্টিশীলতায়। জীবন নাট্যের এ অন্তিম দৃশ্য এভাবে আমাকে দেখতে হবে ভাবিনি কখনো। তাকে নিয়ে ভাবনার শিকরগুলো ঢালপালা মেলে স্মৃতির এলবামের মত থরে থরে সাজানো। তাকে ভাবতে গিয়ে অন্তরময় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। সব শেষে বুকের ব্যথার পাথরটা নামিয়ে শুধু বলবো..
“মানুষের অন্তরে বেধে ছিলে ঘর মরনের পরে তুমি তাইতো অমর”
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...