নারায়ণগঞ্জ জেলার সব সড়ক এখন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা-মিশুকের দখলে। অনুমোদন ও লাইসেন্স ছাড়াই শহরের অলিগলি ছাপিয়ে প্রধান সড়কগুলোতে অবাধে চলছে এসব যানবাহন। দিনের পর দিন এসব যানবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে নিত্য যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যার ফলে ভোগারি শিকার হচ্ছে। সেই সাথে প্রতিটা সড়কেই এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজি নামক তান্ডব। এই অনুমোদনহীন ও লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা ও মিশুক হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কিছু রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা নেতাকর্মী পুলিশ প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা ও কথিত নামধারী সাংবাদিকদের যৌথ আতাতে দাবড়িয়ে দিব্ব্যি চলছে শহরে।
স্থানীয় জনগণ বলছে, করোনা মহামারির আগে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটো-মিশুক নারায়ণগঞ্জ জেলার গলিতে চলত। কিন্তু করোনা আসার পর গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবার পর প্রধান প্রধান সড়কে বেপরোয়া গতিতে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন এই বাহনে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। শুধু তাই নয়, আইনের তোয়াক্কা না করেই শহরে দিন দিন ভয়ঙ্কর আকারে বেড়েই চলছে তিন চাকার ওই বাহনটি। এতে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই নিরুপায় হয়ে ওই বাহনে মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছেন।
জানা যায় এই সব অটো-মিশুক ও অটোরিকশা গুলোতে শহরের বেশ কিছু নামে বেনামে ও জেলার বাহিরের বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের স্টিকার লাগানো। আর এই স্টিকার গুলোর জন্য প্রতিটি অটো,অটোরিকশা ও মিশুককে দিতে হচ্ছে এককালীন সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতিটি গাড়ীর জন্য মাসিক দিতে হয় আরো ১৫০০-২৫০০ টাকা। এই এককালীন ও মাসিক টাকা আবার ভাগ হচ্ছে দুই ভাগে। এক ভাগ যাচ্ছে কথিত সাংবাদিকদের পকেটে অন্য ভাগ যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) আবুল বাশারের পকেটে।
স্টিকার ছাড়া গাড়ীগুলো আবার মাসিক চুক্তিও হচ্ছে সেই কথিত সাংবাদিকদের সহযোগিতায় কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার সাথে। এছাড়াও চাষাড়া শহরমুখী আসা স্টিকার ছাড়া গাড়ী দুই বেলা করে সকাল ৮টায় দিতে হচ্ছে ৫০টাকা ও দুপুরে জন্য ১২টায় দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। দিনে মোট ১০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে ২নং রেলগেইট ও ফলপট্টিতেও আলাদা আলাদা করে সকাল ৮টায় ও দুপুর ১২টায় ২০ টাকা করে ৪০ টাকা দিতে হয় পুলিশ সদস্যকে এবং এই অটো-মিশুক গুলোকে আবার শহরে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন রেকারের কর্মকর্তাকে মাসিক ২হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।
সাংবাদিকদের স্টিকার ব্যবহৃত অটো-মিশুক গাড়ীর চালকরাও নির্ভয়ে শহরে যাত্রী নিয়ে দিব্ব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের শহরে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও কেনো শহরে ঢুকছে জানতে চাইলে বেশ কিছু অটো ও মিশুক চালকরা জানায়,আমরা প্রতি মাসে টাকা দেই। আর পুলিশের থেকে বড় যে বাপ আছে তাদেরকেই টাকা দেই। আমাদের যদি ধরে একটা ফোন দিলেই তারা সাথে সাথে আমাদের ছেড়ে দেয়।
পুলিশের সাথে সাংবাদিকদের যৌথভাবে চুক্তি হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের অবাধে অটো,মিশুক ডুকার বিষয়টি অস্বীকার করে রেকারের কর্মকর্তা সহকারী উপ-পরিদর্শক আবুল বাশার বলেন,আমাদের কাছে আপনাদেরই সাংবাদিকরাই ফোন দিয়ে অটো মিশুক ছুটায়।
কোন কোন সাংবাদিক অটো ছুটিয়ে নেয় এর তালিকা দেবার কথা বললে আবুল বাশার বলেন, কোন কোন সাংবাদিক ফোন দিয়ে অটো-মিশুক ছুটায় সেটা আমাদের ট্রাফিকের ইমরান স্যার জানে। কারন স্যারকেই উনারা ফোন দেয়। আপনে স্যারের সাথে কথা বলেন স্যার যদি বলে তাহলে আমি দিতে পারবো। এই তালিকা দেবার এখতিয়ার আমার নেই।
চাষাড়া ট্রাফিক বক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিকের ইন্সপেক্টর ইমরানকে সাংবাদিকদের নাম দিতে বললে তিনি জানান, কোন কোন সাংবাদিক অটো-মিশুক ছুটায় তা আমাদের এডমিন স্যার করিম স্যার আছে তিনি জানেন। কারণ এই জেলার পুরো দায়িত্ব করিম স্যারের। আমি কিভাবে দিবো কোন কোন সাংবাদিক অটো-মিশুক ছুটায় বা তারা মাসিক টাকা নেয় বা দেয়। আপনে এডমিন স্যারের সাথে কথা বলেন। আমি কোন সাংবাদিকদের লিস্ট দিতে পারবো না।
ট্রাফিক পুলিশের এডমিন ইন্সপেক্টর একে করিম এ বিষয়ে বলেন, আপনেরা পেপারে আগে যে নিউজ করছেন তাতে কি কিছু হইছে! কিচ্ছু হয় নাই। শুধু শুধু আপনেরা নিউজ করছেন। এতে কোন কাজই হয় নাই। আমি আপনাকে কোন সাংবাদিক মিশুক, অটো, ব্যাটারিচালিত রিকশা ছুটাচ্ছে বা আমাকে ফোন দিচ্ছে আপনাকে তথ্য দিতে পারবো না। আপনে সাংবাদিক আপনে তা বের করেন। আমাদের কাছে যারা ফোন দেয় আমরা কিন্তু মানবতার খাতিরেই তাদের অনুরোধ রাখি। এখন যে ফোন দিচ্ছে সে কার কাছ থেকে কত টাকা নিচ্ছে বা মাসিক কত টাকা নিচ্ছে তা আমাদেরওতো বলে না। হ্যাঁ কিছু কিছু আছে তারা মিশুক অটো ছুটায় যাদের স্টিকার লাগানো থাকে।
তিনি আরো বলেন, অপরাধ কখনো নির্মূল হয় না কিন্তু নিয়ন্ত্রণ আছে। নারী নির্যাতন নির্মূল আইন আছে? নেই কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা যানজট নির্মূল করতে পারবো না চেষ্টা করছি যানজট নিয়ন্ত্রণে। এতটুকু তো আমরা করতেই পারি তাদের জন্য। এই মাসে মোবাইল কোর্ট হয়েছে, কয়জন ম্যাজিস্ট্রেট এসেছে এই অটো-মিশুক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা দমনে? আমাদের কাজ যানজট নিরসনে। আমরা সেটাই করছি।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...