কবি ও প্রাবন্ধিক মজিদ মাহমুদ। যাঁকে দেখলেই বোঝা যায় তিনি একজন গোছালো মানুষ। তাঁর গবেষণা, তাঁর বক্তব্য আমার মত অনেক জনকেই সমৃদ্ধ করে। ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন একজন আধুনিক কবি মজিদ মাহমুদ। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত চরগড়গড়ি গ্রামে গড়ে তুলেছেন ‘চরনিকেতন কাব্যমঞ্চ’, ‘বৌটুবানী পাঠশালা’, ‘কবিতা উদ্যান’, অসহায় বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য শেষ আশ্রয়স্থল ‘গোধূলি বিলাস’ এবং ‘বিশ্বকুটির’ নামের আধুনিক এক পান্থশালা। মজিদ মাহমুদ-এর আহবানে সম্প্রতি উদযাপিত হলো তিনদিনব্যাপি ‘চরনিকেতন সাহিত্য উৎসব-২০২৩’। এপার-ওপার বাংলা মিলিয়ে শত শত কবি-লেখক-সাহিত্যিকের মিলন মেলায় পরিপূর্ণ ছিলো ‘চরনিকেতন’। যা থেকে আমরা বলতেই পারি বাংলা সাহিত্যের আরেক তীর্থ ভূমি হয়ে উঠেছে চরনিকেতন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে নিজের শিক্ষাচিন্তার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে ২০ বিঘা জমি নিয়ে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘শান্তিনিকেতন’ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর পাঁচজন ছাত্র নিয়ে ‘ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম’নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ধাপে ধাপে এই শান্তিনিকেতনেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেন।
এছাড়াও জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বিশ্বের সর্ববৃহত সমুদ্র সৈকতে গড়ে তুলেছেন ‘দরিয়ানগর কবিতা মেলা’। রাষ্ট্রের সহায়তা সেখানে নির্মিত হয়েছে ‘হুদা কবিতা মঞ্চ’।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। যা বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করে আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ নির্মানের পথে।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান একজন মজিদ মাহমুদ স্বপ্ন দেখেন নিজ গ্রামের মানুষগুলোর ভাগ্য উন্নয়নের। শিশু থেকে বৃদ্ধ, এমনকি সমাজের নারীদের স্বনির্ভরতা তৈরিতে গড়ে তুলেছেন বৌটুবানী পাঠশালা, আশ্রম, ওসাকা নামের এনজিও। চরগড়গড়ি গ্রামে কবি মজিদ মাহমুদ এর পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি পাঠাগার।
কবি ও প্রাবন্ধিক চিন্তক মজিদ মাহমুদ -এর ডাকে চরনিকেতন সাহিত্য উৎসব আমাকে শানিত করেছে। আসলে বাংলা সাহিত্যে বর্তমান সময়ে গণমানুষের কবিদের অভাব অনেকেই উপলব্ধি করেন। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে এ ধরনের উৎসব গণমানুষের কবি তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। এতটা শৃঙ্খল আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।
এ বছর বাংলাদেশ এবং বিদেশের প্রায় শতাধিক কবি, ঔপন্যাসিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রকাশক এবং সমাজকর্মী বর্তমান বিশ্বের সংস্কৃতি ও রাজনীতির প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি নিয়ে পরস্পরের মধ্যে ভাব বিনিময় ও আলোচনা করা হয় চরনিকেতন সাহিত্য উৎসবে। কবি কন্ঠে কবিতা পাঠ, সাহিত্য আলোচনা সেমিনার, আবৃত্তি, গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখর ছিলো তিনদিনের এই উৎসব।
জয় হোক বাংলা সাহিত্যের,
জয় হোক কবি, গবেষক ও সংগঠক মজিদ মাহমুদের।
শুভ সময়।
লেখক –
কাজী আনিসুল হক
সাংবাদিক, সংগঠক ও কবি।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...