মাদক, চাঁদাবাজি ও হত্যাসহ প্রায় ১৩ মামলার আসামী মোঃ রাজু প্রধান(৩৩) কে কোনভাবেই তার বেপরোয়া গতি রোধ করতে পারছেনা আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে কাশিপুর ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সর্বস্তরের সাধারন মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, এমন কোন অপকর্ম নেই যা রাজু প্রধানের দ্বারা হচ্ছেনা। বাবা রিয়াজ প্রধান ও তার মা পারভীন বেগমের আস্কারায় অনেকটাই বেপরোয়া ছেলে রাজু প্রধান। সাথে রাজু প্রধানের অপরাধ জগতের অন্যতম সহযোগি নিজাম ড্রাইভারের ছেলে রাশেদ ও রাসেল, নাসির চেয়ারম্যানের ছেলে রাসু, আলমাস দেওয়ানের ছেলে দেলা, দরবেশ মিয়ার ছেলে মামুন ও ইব্রাহিমের ছেলে রাকিব।

ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী রাজু প্রধানের নেতৃত্বে তার সহযোগিরা দেওভোগের নুর মসজিদ, ঠাকুর বাগি, শতাব্দী গার্মেন্টস এর মোড় থেকে মোবারকের বাড়ি পর্যন্ত, আদর্শনগর ও নুর মসজিদ বাশমুলিসহ প্রতিটি এলাকায় প্রায় ৩০/৪০ জনকে নিয়ে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ জিম্মিকরনের মত বিভিন্ন অপকর্ম করে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। পাশাপাশি তাদের কাছে রক্ষিত মাদক দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ারও হুমকি প্রদান করে। গত ৪ দিন পূর্বে নারায়ণগঞ্জের জেল হাজতে রাসেল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত সেই রাসেলও ছিলো রাজু প্রধানের মাদক কারবারির অন্যতম সহযোগী। যিনি ভ্যান গাড়িতে করে তরকারী বিক্রির অন্তরালে মাদক বিক্রি করতো বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা আরো জানান, সন্ত্রাসী রাজু প্রধান মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিল। দীর্ঘদিন যাবৎ তার এহেন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। অবৈধ মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, তার হিংস্রতা, অত্যাচার ও নির্যাতনের ভয়ে সংক্ষুব্ধ জনগণ কথা বলার এবং প্রতিকার চাওয়ার সাহস পেত না। প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি করা তার দৈনন্দিন বিষয়। এলাকার কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণের সময় সে ইট, বালু সরবরাহের কথা বলে জোরপূর্বক মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। এসকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ র‌্যাব-১১, সিপিএসসি, নারায়ণগঞ্জ এর একটি বিশেষ দল রাজু প্রধানের উপর গোয়েন্দা নজরদারী চালিয়ে গত ৩১ মার্চ অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের জন্য অবস্থানকালে উল্লিখিত দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ উক্ত আসামীকে হাতে-নাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

রাজু প্রধানের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকা, মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজি ও হত্যা মামলাসহ প্রায় ১৩টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এফআইআর নং-২৭/৩১৫, তারিখ- ১০ মে ২০১৯; ধারা- ৩৬(১) সারণির ১৪(ক)/৪১ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত, ফতুল্লা থানার এফআইআর নং-৪৯, তারিখ- ১৭ মে ২০১৭; ধারা- ১৯(১) এর ৯(খ) ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন; এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত, ফতুল্লা থানার এফআইআর নং-৫, তারিখ- ৪ ডিসেম্বর ২০১৬; ধারা- ১৯(১) এর ৯(খ) ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন; এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত, ফতুল্লা থানার এফআইআর নং-৪০, তারিখ- ১৬ নভেম্বর ২০১৬; ধারা- ১৯(১)(ক) ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন; এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত,ফতুল্লা থানার এফআইআর নং-৭১, তারিখ- ২৭ নভেম্বর ২০১৫; ধারা- ৪(১)/৫ আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ সংশোধনী ২০০৯; এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত,ফতুল্লা থানার এফআইআর নং-৬২, তারিখ- ২২ মার্চ ২০১৪; ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০; এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত,ফতুল্লা থানার এফআইআর নং-২৪, তারিখ- ১৭ অক্টোবর ২০০৮; ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬(২) পেনাল কোড-১৮৬০; এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত,ফতুল্লা থানার এফআইআর নং-১৬, তারিখ- ০৮ ডিসেম্বর ২০০৬; ধারা- ১৯(১) এর ১(ক) ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন; এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত,ফতুল্লা থানার এফআইআর নং-৪, তারিখ- ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮; ধারা- ১৯(১) এর ৯(খ) ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন; এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত, ফতুল্লা থানার জিডি নং-২৮৮, তারিখ- ০৬ জুলাই ২০২০; এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত, ফতুল্লা থানার এফআইআর নং-৭, তারিখ- ০৪ জুলাই ২০২০; ধারা- ৪৫৪/৩৮০ পেনাল কোড-১৮৬০; এই মামলায় সে তদন্তে সন্দিগ্ধ।

স্থানীয়দের দাবী এতগুলো মামলায় আসামী হয়ে কিভাবে এখনও পর্যন্ত দিব্ব্যি প্রকাশ্যে থেকে সাধারন মানুষের জীবনকে নাভিশ্বাস করে তুলেছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রকার নিস্তার পাচ্ছিনা রাজু প্রধান ও তার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার থেকে।

রাজু প্রধান ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনে র‌্যাব-১১ ও জেলা পুলিশ সুপারের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন কাশিপুর ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সর্বস্তরের সাধারন মানুষ।