বাংলার মানুষ আজ জেগে উঠেছে। জেগে না উঠে উপায়ও নেই। কারণ এই যে গরম পড়েছে, সকালে খুব লম্বা সময় ঘুমিয়ে থাকাও সম্ভব না। ফলে বাংলার মানুষকে জেগে উঠতেই হতো। আর জেগে ওঠার ফলস্বরূপ এই পৃথিবী পাচ্ছে নতুন নতুন সব উদ্যোগ। এই যেমন, গাছের ব্যাপারে অত্যন্ত সহৃদয় হয়ে উঠেছে বঙ্গদেশের মানুষ। গাছের প্রতি তাদের মমতা রিখটার স্কেলে এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, মাটি পেলেও গাছ লাগাচ্ছে, না পেলেও লাগাচ্ছে!
বর্তমানে ফেসবুকের নীল জমি গরম হয়ে গেছে গাছের জন্য হাহাকারে। এ দেশের মানুষ তারস্বরে চিৎকার করছে, ‘গাছ, তুমি কই? তুমি কই?’ বলে। এই হাহাকার করা জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেমন ফার্নিচার বানানোর জন্য গ্রামের কড়ই গাছ কেটে ফেলা মানুষ আছে, তেমনি পাশের বাড়ির ছাদে লাগানো গাছের টবের কারণে মশা বাড়ছে বলা মানুষও আছে। এমনকি আছে নিজের বাড়ির পাশে গাছগাছালি লাগানোর জন্য এক ইঞ্চিও জায়গা না ছাড়া ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও। তাদের আফসোস দেখে ও শুনে মনে হচ্ছে, গাছ তারা লাগাবেনই। জমি প্রয়োজনে দখল করে হলেও তারা লাগাবেন। অন্তত ইচ্ছা তেমনটাই।
অবশ্য এই ইচ্ছার পুরোটাই ফেসবুকের জমিতে বেশি হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতেই পারে যে, ফেসবুকের জমিতে গাছ লাগানো তুলনামূলক সহজ। আর এই দেশের ইন্টারনেট খেয়ে বেঁচে থাকা মানুষের পক্ষে সেটি করে ফেলা সম্ভব ত্বরিতগতিতে। শুধু মেগাবাইট খরচ করলেই যে হবে!
নিশ্চয়ই শিরোনাম দেখে আপনারা মনে করছেন, ফেসবুকে গাছ লাগানোর এই আলাপ অর্থহীন। একটিবার ভেবে দেখুন তো, যে ফেসবুকে আমরা সংগ্রাম করতে পারি, গালিগালাজ করে কারও অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করতে আমাদের ঘণ্টাও প্রয়োজন হয় না, সমাজ বদলে দেওয়ার হাজারো তরিকা যে ফেসবুকে প্রতিনিয়ত উৎপন্ন হয়, রাজনীতি-অর্থনীতি-ক্রীড়ানীতি বা পোশাকনীতির অনুপুঙ্ক্ষ বিশ্লেষণ যে ফেসবুকে একটু খুঁজলেই পাওয়া যায়-সেখানে কি একটু গাছ লাগানো যাবে না? এটা কোনো কথা?
তাই আমাদের প্রথমেই লেগে পড়তে হবে কাজে। শুরুটা করতে হবে গাছের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করার মাধ্যমে। একটু বড় গাছ পেলে ভালো হয়। ঘাসের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করলে লাভ রিঅ্যাকশন খুব একটা পাওয়া হয়তো যাবে না। হাজার হোক লাভ রিঅ্যাকশন বেশি না পেলে তো সেলফি পোস্ট করে লাভ নেই। আর সেলফি তোলার কাজটি আমরা ভালোই পারি। সুতরাং তার জন্য একটু কষ্ট করে অন্তত ৪/৫ ফুট উচ্চতার লিকলিকে গাছ হলেও খুঁজতে হবে। প্রয়োজনে না হয় রাস্তার ডিভাইডারে লাগানো গাছের সাথেই লেপ্টে যাওয়া হলো। ক্ষতি তো নেই।
এভাবে গাছের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করতে হবে কমপক্ষে টানা ৩ দিন। এতে করে ফেসবুকের নীল–সাদা জমিন কিছুটা সবুজ হয়ে উঠবে। এরপর পানি ফেলার ইমোজি ব্যবহার করে ফেসবুকের সেই জমিন ভিজিয়ে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, পানি ফেলার ইমোজি ব্যবহারটা দক্ষ হাতে করতে হবে। কেউ আবার বেশি উৎসাহী হয়ে মোবাইল বা ল্যাপটপ ভিজিয়ে ফেলতে যাবেন না যেন! বুঝতে হবে যে, পানি ঢালতে হবে মেগাবাইট ব্যবহার করে। ওটিই একমাত্র পন্থা। এভাবে পানি ঢেলে যেতে হবে আরও ৩ দিন।এই তো গেল ৬ দিনের কর্মকাণ্ড। এরপর মূলত ১ দিনের কাজ। সপ্তম দিনে গাছের কিছু ইমোজি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস পোস্ট করতে হবে। যে যত বেশি গাছের ইমোজি নেবেন, তার লাভ তত বেশি। কারণ আপনার অ্যাকাউন্টেই তো গাছগুলো থাকছে। নিজের লাভ তাই নিজেকেই বুঝতে হবে। এভাবে অগণিত গাছ আপনি ফেসবুকে লাগিয়ে ফেলতে পারবেন।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...