মোঃ মনির হোসেন : আদর্শিক রাজনীতি আজ বিলুপ্ত প্রায়! তোষামোদির বদৌলতে চলছে বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, সেলফির রাজনীতি, কে কিভাবে কত তাড়াতাড়ি নেতার কাছে যাবে সেই প্রতিযোগিতা।
সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন “বিলবোর্ড, সেলফিতে নয় জনতার হৃদয়ে লিখো নাম” শিরোনামে ‘বাংলা ট্রিবিউনে’ একটি কলাম লিখেছিলেন। লেখাটি হৃদয়ে দাগ কাঁটতে সক্ষম হয়েছে। ধন্যবাদ, প্রচার বিমূখ মাননীয় সংসদ সদস্যকে। তাঁর অভিব্যক্তি “বিলবোর্ডে লিখো নাম, সে নাম মুছে যাবে। সেলফিতে লিখো নাম, সে নাম হারিয়ে যাবে। জনতার মনের গহীণে লিখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে।” সত্যিই হৃদয়স্পর্শী অভিব্যক্তি।
সম্প্রতি আদর্শিক রাজনীতি হারিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে পেশী শক্তিধর, বিত্তশালী, টাউট-বাটপার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাস্তান, দালাল ও চাটুকার শ্রেণির অনুপ্রবেশ লক্ষণীয়। তাই তো কাউয়া, হাইব্রিড, ফার্মের মুরগি শব্দগুলোর আবির্ভাব ঘটেছে। রাস্তাঘাটে চোখ বুলালে বিভিন্ন নেতা-নেত্রীর বিশাল বিলবোর্ড, অসংখ্য ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার দৃশ্যমান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির সেলফি ঝড়ে উত্তাল। বিভিন্ন দিবসে পক্ষে শুভেচ্ছা জানানোর হিড়িক লেগে যায়। মনে হয় নেতা শুভেচ্ছা জানানোর কোন ফুসরৎই পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলে এর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা নাম সর্বস্ব সংগঠনের নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে দেয়াল ও গাছের ডাল সয়লাব। দলের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না এ অপসংস্কৃতি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এসব বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অত্যন্ত ছোট আকারের থাকে। এর নিচে স্থানীয় কোন নেতার ঢাউস সাইজের ছবি। নিচে সৌজন্যে যে ছবিটি থাকে সে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যক্তি নয়। এমনকি বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকে। আসলে অপকর্ম আড়াল করতেই নেতা তুষ্টিতে এ অপকৌশল। জানিনা এতে নেতা কতটা লাভবান হন। তবে জাতি যে বিভ্রান্ত তাতে কোন সন্দেহ নেই। কলুষিত হচ্ছে দলের রাজনৈতিক আদর্শ। রোদ-বৃষ্টিতে ও ঝড়ে বিবর্ণ এসব ছবি কখনও মাটিতে পড়ে থাকে অথবা গাছের ডালে ঝুলতে থাকে। এহেন অপকর্ম করে অপরাধীরা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হলেও কোন না কোন সময় ফেঁসে যেতে পারেন বা ফেঁসে যাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। চাটুকার ব্যক্তিটি অপকর্মে ধরা পড়লে তখন নেতা লজ্জিত হওয়া ছাড়া উপায় কী?
সম্প্রতি করোনা টেস্ট জালিয়াতির কারণে গ্রেফতারকৃত রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ, স¤্রাট, পাপিয়ারা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, মন্ত্রী, এমপি, শীর্ষ আমলা, আইনশৃংখলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী হেন কোন ক্ষমতাধর ও বিশিষ্ট ব্যক্তি বাধ নেই যাদের সাথে সাহেদের অন্তরঙ্গ ছবি নেই। এটাই ছিল তাদের অপকর্মের মওকা। অতএব সাধু সাবধান। অবশ্য এর ব্যতিক্রম নেই এমনটি বলছি না। অনেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে দেশপ্রেম ও নৈতিকতার আলোকে রাজনীতিকে এখনও কলুষমুক্ত রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
লেখক-
মোঃ মনির হোসেন
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সিনিয়র সহ-সভাপতি, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...