আহমেদ আবু জাফর : সরকার আসে সরকার যায়। সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করে। কিন্তু সাংবাদিকদের বেলায় কেবলই সরকারের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। তারপরেও সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত নানা ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রের হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কী পেল কি পেলনা তা নিয়ে যেন কোন কালেই ভাবেনি। কোন সরকারই সাংবাদিকতার অন্তর্নিহিত সমস্যা নিয়ে কথা বলেনি। প্রয়োজন ফুরালে কেউই ভাঙ্গা কুলার মত ফেলে দিতে দ্বিধা করেন না।
স্বাধীনতা কিংবা দেশ গঠনের ৪ যুগ পেরিয়ে গেলো। আজও সাংবাদিকরা খুঁজে পেলনা আপন নিবাস অর্থাৎ একটি অধিদপ্তর। তথ্য অধিদফতরকে সাংবাদিকদের দপ্তর বলা হলেও তা নিছক ভুল এবং মিথ্যা আশ্বাস মাত্র।
সাংবাদিকদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ১৯৭৪ সালে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি মহৎ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রেস কাউন্সিলটি সাংবাদিকদের কোন কাজে আসছেনা। সেটি আজ দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছে। বিগত দুই বছর আগে সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়নের কাজটিও ঝুলে আছে। সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে যে কেউ এই পেশায় অনুপ্রবেশ করতে পারবেনা। দ্রুত নিয়োগ নীতিমালাটি প্রণয়নও সময়ের দাবি।
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভূত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ অবধি যেকোন সংকটময় পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। হাতেগোনা দু’চারটি মিডিয়া ছাড়া বাকিসব মিডিয়া দেশের সংকটময় মূহুর্তে জীবনবাজি রেখে কাজ করে গেছেন। কিন্তু বিনিময়ে কি পেলেন!
রাষ্ট্রের হয়ে কাজ করা দেশের সকল শ্রেণীপেশার মানুষই সরকারের কাছ থেকে নানা রকম সুবিধা নিচ্ছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের কাছ থেকে সাংবাদিকরা আজ পর্যন্ত পেশার স্বীকৃতি টুকুও পাননি।
বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারী করোনা চলাকালে দেশের গণমাধ্যম মানুষের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। প্রতিমূহুর্তের খবর পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের দোঁড়গোড়ায়। জীবন সংসারের মায়া ছেড়ে তারা ছুটে চলছেন করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে। সরকারের বেতনভোগী প্রশাসনের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরাও কাজ করছেন। পেশাগত কাজ করতে গিয়ে প্রশাসনের যাতাকলে জরিমানা, মামলা, কারাদন্ড, সন্ত্রাসি-ত্রান চোরদের হামলা, ক্যামেরা-মোবাইল ছিনতাই ও লাঞ্ছনার ঝুলি কাঁদে নিয়ে তারা অবিরাম ছুটে চলছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসক ও প্রশাসনের লোকজনকে নানাবিধ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা করা হলেও সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচেছন। ইতিমধ্যে ৫ সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হলেও সাংবাদিকেরা মাঠ ছেড়ে যাননি। সম্প্রতি কিছু পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ হলেও তারা দ্রুত গতির অনলাইন ভার্সন চালু রেখেছেন। তাৎক্ষনিক সব খবরই পৌছে দিচ্ছেন সাংবাদিকেরা।
প্রশ্ন হলো, কী পেল সাংবাদিকেরা! বর্তমান সরকার বিগত নির্বাচনে ২০ কোটি টাকা সাংবাদিক কল্যান তহবিলে জমা দিয়েছেন। তাতে মানা হয়নি জেলা কোটা পদ্ধতি। আমরা যদ্দুর জেনেছি ওই টাকার বেশিরভাগ ঢাকার সাংবাদিকরা লুটেপুটে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফ তৃণমূল সাংবাদিকদের একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক। সাংবাদিকদের মর্যাদা, দাবি ও অধিকার আদায়ের একটি জাতীয় প্লাটফর্ম।
বিএমএসএফ’র সারাদেশে সাড়ে তিনশ শাখায় প্রায় ১২ হাজার সাংবাদিক সদস্য রয়েছেন। তারা কিছুই পাননি। ওই টাকাগুলো কেবল ঢাকার ২-৩টি হাতেগোনা সংগঠন লুটেপুটে নিচ্ছেন। মফস্বলে কাজ করা হাজার হাজার সাংবাদিক সরকারের দেয়া কল্যান ফান্ডের টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট নিকট দাবি জানানো হয় চলমান মহামারী করোনা মোকাবেলায় সরকারের অন্যসব দপ্তরের পাশাপাশি তথ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হোক। আপনি মানবতাবাদী একজন প্রধানমন্ত্রী। তাই দয়া করে অন্যসব সরকারের মত সাংবাদিকদের ভাঙ্গা কুলার ন্যায় ব্যবহার করবেন না।
লেখক-
আহমেদ আবু জাফর
সাংবাদিক ও সাধারণ সম্পাদক
কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম।
মুঠোফোন : ০১৭১২৩০৬৫০১
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...