দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ দিয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সাধারণ ভোটারদের ভয়-ভীতি ও মারধরের অভিযোগ এনে সোমবার (১ জানুয়ারি) ইসিতে তৈমূর অভিযোগপত্র জমা দেন।
ইসিতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে তৈমূর আলম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় আমার নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত স্থানীয় এমপি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পালিত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে হুমকি-ধামকির শিকার হচ্ছে।
এ ছাড়া তাঁর সন্ত্রাসীরা মাদকাসক্ত হয়ে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এমনকি বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতিও দেখাচ্ছে। আমার নির্বাচনী প্রচারণার কাজে সবদিক থেকে বাধা-বিঘ্ন ঘটাচ্ছে গাজীর সন্ত্রাসীরা।’
তৃণমূল বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, ‘মুড়াপাড়া ইউনিয়নের সন্ত্রাসী শেখ ফরিদ মাসুম ওরফে টাকি মাসুম গত ২৫ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে বাড়ির পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধের হুমকি দেন।
তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মাদক, অস্ত্র, লুটপাট ও চাঁদাবাজির বেশকিছু মামলা রয়েছে। রূপগঞ্জে ভোটারদের মারধর, ঘরবাড়ি লুটপাট, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, হুমকি ও ভয়-ভীতির ঘটনা এখন দৈনন্দিন বিষয়। কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলেও প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া পাচ্ছে না।’
সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী তৈমূর বলেন, ‘কেউ এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে সন্ত্রাসীদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে।
রূপগঞ্জের চানপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার হাসমত দয়ালের ছেলে শমসের আলী খান ওরফে ডাকু শমসের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এই ডাকাত শমশেরের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদকের ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। নির্বাচনের আগেই রূপগঞ্জ থানায় হওয়া ১৩টি মামলার আসামি এই ডাকু শমসের। গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে সাধারণ মানুষদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করা ও প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র হাতে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে শমসের।’
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাছিমপুর এলাকায় সোনারগাঁও উপজেলার আফসার উদ্দিনের ছেলে তাওলাদ একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী।
সোনারগাঁ এলাকায় জোড়া খুনের মামলার আসামি তাওলাদ। মুড়াপাড়া এলাকার মাছিমপুর গ্রামে বিয়ের কারণে এই এলাকায় তিনি সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছেন। মন্ত্রী গাজীর এপিএস ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন’ এমদাদের লোক হিসেবে তিনি কাউকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছেন, যা ইতোমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। তাওলাদের নামে সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ থানায় একাধিক খুন, ধর্ষণ, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ‘কালাদী গ্রামের সুরুজ মিঞা মুন্সির ছেলে মোহাম্মদ আলী হোসেন ওরফে আলী বান্দা মন্ত্রীর এপিএস এমদাদের ছত্রছায়ায় একইভাবে ভোটারদের ও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে।’
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুড়াপাড়া ইউনিয়নের তোফায়েল আহমেদ আলমাস প্রকাশ্য দিবালোকে সাধারণ মানুষদের বাড়ি গিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তৈমূর। কেউ ভোট না দিলে গুম-খুনের হুমকি দিচ্ছেন। কিছুদিন আগেও এক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা এবং এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, ‘মাছিমপুরের আরেক মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মামুন মিয়া। তাঁর বিরুদ্ধেও রূপগঞ্জ থানায় বেশ কিছু মামলা আছে। তাঁর এলাকার কোনো ভোটার যাতে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে না পারেন সে জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন।’
তৈমূরের লিখিত অভিযোগে, মাছিমপুরের রনি মিয়া, আব্দুল হামিদের নাম উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ‘মন্ত্রী গাজীর এপিএস এমদাদুল হক দাদুল ওরফে দাদা এমদাদের নেতৃত্বে থাকা সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি আকুল আবেদন করছি।’
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...