শহীদ রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে তিনি প্রাণ হারান। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ১৫ দিনের কর্মসূচি পালন করছে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে জিয়াউর রহমান যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, বিশ্বে দ্রুত অগ্রসরমান দেশ হিসেবে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি চক্রান্তের অংশ হিসেবে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ঘাতকদের বুলেটে প্রাণ হারান বাংলাদেশের ইতিহাসের ক্ষণজন্মা এই রাষ্ট্রনায়ক।
প্রতি বছর জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে পালন করা হলেও দুই বছর কারাগারে এবং চার বছর শর্তসাপেক্ষে জামিনে থাকায় মোট ৬ বছর তার অনুপস্থিতিতে দিনটি পালন করছেন নেতাকর্মীরা। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো ১৫ দিনের কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে রয়েছে- আলোচনা সভা, পোস্টার প্রকাশ ও কালোব্যাজ ধারণ, কালোপতাকা উত্তোলন, সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, জিয়ার কবরে ফুল দেওয়া ও ফাতেহা পাঠ, দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্রসামগ্রী বিতরণ।
দিনটি উপলক্ষে আজ ভোর ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালোপতাকা উত্তোলন করা হবে। নেতাকর্মীরা কালোব্যাজ ধারণ করবেন। সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। এসব স্থানে দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। আগামীকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সারাদেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলায় খাদ্য বিতরণ, আলোচনা সভা, সেমিনার, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, রচনা প্রতিযোগিতা, স্বরচিত কবিতা পাঠ ও বইমেলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে দেওয়া এক বাণীতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মহান উদার গণতন্ত্রী শহীদ জিয়ার জনপ্রিয়তা দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা কখনই মেনে নিতে পারেনি। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোনো ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে থাকেন। জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে- জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান ডামি আওয়ামী সরকার দেশে একদলীয় দুঃশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে বর্তমান সরকার। সে জন্য খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ছাড়াও গণতন্ত্রকামী প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে অনেককে সাজা দেওয়া হয়েছে, নিত্যদিনই অসংখ্য নেতাকর্মীকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে। হত্যা, খুন, গুম ও বিনা বিচারে হত্যা এবং অমানবিক নির্যাতন যেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভাগ্যের লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...