পাঁচ বছর আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারের সব ধরনের নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে পোড়া মাটির ইটের পরিবর্তে শতভাগ ‘ব্লক ইট’ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে আগামী ছয় মাসের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালযয়ের সচিবকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
দেশে বাড়িঘর নির্মাণ এবং সরকারি ভবনের দেয়াল, সীমানাপ্রাচীর, গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে পোড়া মাটির ইট ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ইট তৈরির জন্য কৃষিজমির ওপরের অংশ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়। এতে অনুর্বর হয়ে পড়ছে কৃষিজমি। আর ইট পোড়ানোর সময় ভাটার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় বাড়ছে পরিবেশদূষণের মাত্রা। এ কারণে ২০১৯ সালে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে সরকার। সংশোধিত আইনে সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সম্প্রসারণের কাজে ব্লক ইটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
পরে ওই বছর ২৪ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ব্লক ইট ব্যবহারের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে বলা হয়, সরকারি নির্মাণকাজে ধাপে ধাপে ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়ানো হবে। এ জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে সরকারি নির্মাণকাজের ১০ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সম্প্রতি হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ কনক্রিট ব্লক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন নূর-উস সাদিক চৌধুরী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কনক্রিট ব্লক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি অবঃ লে. কর্ণেল মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন এবং প্রচার সম্পাদক মোঃ মনিরুল ইসলাম সরকার।
আদেশের পর আইনজীবী নূর-উস সাদিক চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সালের সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুসারে চলতি অর্থবছরে সরকাারের সব ধরনের নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে কত শতাংশে ব্লক ইটের ব্যবহার হচ্ছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। সরকারি নির্মাণকাজের বড় অংশ বাস্তবায়ন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজে এখনো প্রচলিত ইটের ব্যবহার বেশি। তাই, পাঁচ বছর আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়েছিল। হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।
২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বরের প্রজ্ঞাপন অনুসারে সরকাারের সব ধরনের নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহারে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং একই সঙ্গে সরকারের সব ধরনের নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহারের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালযয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব, জাতীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ সচিবসহ ৬৫ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...