বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম ও দেশের সামগ্রিক অবস্থার সঙ্গে রাজধানীর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি সবসময় থাকে চাঙ্গা। অতীত ইতিহাস তাই বলে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি কেন্দ্রিক সক্রিয়তা এ জেলাকে সবসময় রাজনীতির মাঠে আলোচনায় রাখতো। কিন্তু এখন আর আগের অবস্থা নেই। দীর্ঘদিন ধরেই নীরব রয়েছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এতটা নীরবতা আগে তেমন একটা দেখা যায়নি। বিএনপির দলীয় প্রধান কারাগার থেকে মুক্তি পাবার পরও সক্রিয় নয় বিএনপি কিংবা দলটির কোনো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। তবে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা মেলে ফটো সেশনের মধ্যে।
রাজনীতির মাঠে একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি। জেলা বিএনপির সবচেয়ে সক্রিয় ও রাজপথের নেতা হিসেবে খ্যাত অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলয়টিও সর্বশেষ জেলা বিএনপির কমিটির পরে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এ ছাড়া জেলা বিএনপি, মহানগর বিএনপি ও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ দলের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন প্রায় মাঠছাড়া। কর্মসূচি পালন তো দূরের কথা কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলোতেও মাঠে দেখা যায় না দলের কাউকে। কিছু নেতা কর্মসূচির ডাক আসলে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাসের অফিসের গলিতে ছবি তুলে তা দিয়ে কর্মসূচি সফল বলে দাবি করেন। এছাড়া জনদাবি কিংবা অন্য কোনো ইস্যুতে মাঠে নেই দলটি।
বিএনপি ছাড়া জেলার অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে। জাতীয় পার্টি তো সরকারের সঙ্গেই আছে, বাম দলগুলো নেই মাঠে। ইসলামী দলগুলোর ও আগের মতো সক্রিয় নয়। সামাজিক ও জেলাভিত্তিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, জাসদ, ন্যাপ রাজপথে সরব থাকলেও এখন ধীরে ধীরে সেটি একেবারেই কমে যাচ্ছে বললেই চলে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা বলেন, বিরোধী দলের সরব হতেতো ইস্যুর প্রয়োজন। দেশের মানুষ সুখে আছে, পেট ভরে খেতে পারছে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো দেশের। তাহলে কী নিয়ে সরব থাকবে? আওয়ামী লীগের রাজনীতি তো সরব রয়েছে, বিরোধী দলের জায়গায় নেই। তারা রাজপথে নামতে পারেনি। মানুষকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করে বলেই তারা নীরবতার পথ বেছে নিয়েছে।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, রাজনীতি এখন চলে গেছে হাইব্রিড, টাকাওয়ালা ও তোষামোদকারীদের হাতে। রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি থাকলে আজ এ অবস্থা হতো না। আর এ অবস্থার জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দায়ী, নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্ব নয়। যাদের মাথায় রাজনীতি আছে, কর্মে রাজনীতি আছে ও ব্যাকগ্রাউন্ডে রাজনীতি আছে তাদের হাত থেকে রাজনীতি কেড়ে নিয়ে বেচাকেনার রাজনীতি করে আজকে রাজনীতিকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আর এখন এটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাজনীতির মোকাবিলা রাজনীতি দিয়ে করতে হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গিয়ে তো রাজনীতি করা যায় না। তাদের হাতে মামলা ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা থাকায় যাকে তাকে ধরে মামলা দিয়ে দিতে পারে। রাজনীতিতে যখন রাজনৈতিক দল প্রতিপক্ষ না থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী প্রতিপক্ষ হয় তখন আর রাজনীতির মাঠে কেউ সরব থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তবে, এটি একদিন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলার এক নেতা জানান, আমরা নীরব নই। আমরা ৩০ ডিসেম্বর বিনা ভোটের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি জেলায় জেলায়। আমাদের শক্তির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের কর্মসূচিতে তেমন মানুষ হয় না বলে হয়তো মনে হতে পারে আমরা রাজপথে নেই। তবে এটিও সঠিক যে, নীরবতার কারণ শক্তিশালী বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল মাঠে নামে না এত ইস্যু থাকতেও। আর নামলেই ফটোসেশন করে। সেদিক থেকে ভাবলে এটাকে নীরবতা বলা চলে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...