দীর্ঘদিন আগেই এনায়েতনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড সহ সকল ওয়ার্ডেরই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী প্রতিটি সংগঠনের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আর কমিটি গঠন না হওয়ায় দল ক্ষমতায় থাকলেও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার এনায়েত নগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতা কর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, গত ১৫ নভেম্বর ২০১৯, সকাল হতেই শহরের ৬৯ নং পশ্চিম মাসদাইর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসতে থাকেন এনায়েতনগর ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। উদ্দেশ্য তিনটি ওয়ার্ডের সম্মেলন হবে সেখানে ঘোষণা করা হবে নতুন নেতৃত্ব। সকাল ১০টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ ছিল পুরো আয়োজনস্থল। সকলে যখন নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনায় সরগরম তখনই জানিয়ে দেওয়া হলো সম্মেলন হচ্ছে না। আর দোহাই দেওয়া হলো এমপি শামীম ওসমানের।
সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, শামীম ওসমান জেলা আওয়ামী লীগের কোন পদে নাই। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম কার্যকরী সদস্য। আর এনায়েতনগর ইউনিয়ন ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সম্মেলন হওয়ার দিন ধার্য ছিল ১৫ নভেম্বর ২০১৯। এটা মূলত ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের অধীনে। সকালে সম্মেলনস্থলে এসে এনায়েতনগর ইউনিয়ন সম্মেলন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় এমপি আমাদের অভিভাবক, এমপি শামীম ওসমানের বাড়ি জামতলাতে যা মাসদাইরের পাশেই। তাঁর কাছ হতে সময় নেওয়া হয়নি। আমরা সকলেই চাই তিনি এখানে উপস্থিত থেকে সম্মেলনটা করবেন। তাই নতুন করে তাঁর দেওয়া তারিখ মোতাবেক সম্মেলন হবে। কারণ তিনি এখন নাই পবিত্র ওমরাতে ছিলেন যখন আজকের তারিখ নির্ধারণ করি।
এদিকে সম্মেলনস্থলে আসা বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আজ রীতিমত আমরা অপমানবোধ করলাম। এ সম্মেলনে যদি শামীম ওসমানকে প্রয়োজনই হতো তাহলে আগে কেন করা হলো না। সম্মেলন ঘোষণা দিয়ে সব কিছু চূড়ান্ত করা হলো, আমরা আসলাম কিন্তু ঘোষণা হলো সম্মেলন হলো না। এটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রীতিমত অপমান করা হলো, খাটো করা হলো। এখন মনে হচ্ছে দলের চেয়েও ব্যক্তি বড়।’ আর এ পর্যন্তই সেই সম্মেলন আজ আর হয় নাই।
পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও কতিপয় কিছু শীর্ষ নেতার সাথে আতাঁত করে বহিরাগতারা দলে প্রবেশ করছে। আর হাইব্রীড নেতাদের ধারায় মাঠ পর্যায়ের ত্যাগীরা বার বার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আর এ কারনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা একে অপরের সাথে বিরোধে জড়িয়ে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দলের হাই কমান্ড নিশ্চুপ থাকায় এনায়েত নগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিকরা রাজনীতিতে এখন নিষ্প্রাণ।
দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা নব্য আওয়ামী লীগারদের কাছে নানা ভাবে নাজেহাল হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। দলের এসব তুচ্ছ বিরোধ তৃনমূলের সাংগঠনিক ভীত দূর্বল করে দিচ্ছে এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।
এদিকে গত ২৯ নভেম্বর ২০২০, সংসদ ভবন এলাকায় সরকারি বাসভবনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নিজস্ব বলয় তৈরি করতে ‘মাই ম্যান’ দিয়ে কমিটি গঠন করা যাবে না তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
থানা আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতা ফটোসেশনেই নিজের রাজনৈতিক কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ রাখেন বলে অভিযোগ কর্মীদের। কমিটির মেয়াদ না থাকলেও নতুন কমিটি গঠন না হওয়ায় নতুন নেতৃৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। যার ফলে বিভিন্ন কর্মসূচীতে ফটোসেশনের পর এসব নেতাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এসব কারনে সক্রিয় ধীরে ধীরে নিস্ক্রীয় হতে শুরু করে। দলের কাছ থেকে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নিলেও বর্তমান সময়ে ওই সব নেতাদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে দলের সাধারন নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তবে দলের সুবিধাবাদী নেতাদের বিতর্কিত কর্মকান্ডে দলের তৃনমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করেছে। সূত্র বলছে তৃনমূল থেকে দাবি উঠেছে, যারা দলের পদ ব্যবহার করে, ঝুট, তেল, পরিবহন সেক্টর থেকে এককভাবে সুবিধা নিচ্ছে ওই সমস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা জানান, দলীয় কর্মকান্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে ক্ষমতাসীন দলে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও দেখা দেখা দিয়েছে নানা ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে একাংশ নেতারা রাজপথে দেখা গেলেও পদধারী অধিকাংশ নেতাই নিস্ক্রীয়। এদিকে, আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কিছু নেতা অনেকটা আরাম আয়েশ করে রাজনীতি থেকে নিজেকে আড়াল করে দিন কাটাচ্ছে। তবে কোন কর্মসূীচতে তাদের সক্রিয় ভূমিকা না থাকলেও দলের নাম ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করে নিতে ভুল করছে না বলে অভিযোগ দলের সাধারন কর্মীদের। মূলত নেতায় নেতায় কোন্দলের কারণে মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটি পুনর্গঠনে বাধা সৃষ্টি করছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। আর নতুন কমিটি গঠন না হওয়ার কারণে দল ক্ষমতায় থাকার পরও রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিষ্প্রাণ।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...