নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নয়ন হত্যা মামলায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ও তার মেয়ে সুমনা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হত্যাকাণ্ডের মূল ঘটনা, জড়িতদের নাম ও লাশ গুমের পরিকল্পনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, সাবিনা তার পরকীয়া প্রেমিক ঠোঙ্গা রাসেল ও ভাড়াটে খুনি চয়নকে নিয়ে স্বামী নয়নকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশের পাশেই তিনজন মিলে ইয়াবা সেবন করেন- এমন ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আতাউর রহমান। তিনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাতের আদালতে সাবিনা ও তার মেয়ে সুমনা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, নয়ন তিন বছর কারাগারে থাকাকালে সাবিনার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে ঠোঙ্গা রাসেল ওরফে ‘ঠোঙ্গা রাসেল’-এর। তারা নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন। নয়ন কারাগার থেকে বেরিয়ে বিষয়টি জানতে পারলে দাম্পত্য কলহ বাড়ে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সকালে সাবিনার মোবাইলে রাসেলের ফোন পেয়ে নয়ন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন। কিছুক্ষণ পর রাসেল বাসায় এলে নয়ন ও তার মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে সাবিনা ও রাসেল মিলে নয়নকে ঘরের ভেতরে টেনে নিয়ে গিয়ে লাঠি ও চাকু দিয়ে আঘাত করেন। নয়ন অচেতন হয়ে পড়লে তারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এরপর সন্ধ্যায় সাবিনা তার মেয়েদের নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়। পরে রাতে সাবিনা, রাসেল ও তাদের সহযোগী চয়ন লাশ গুমের প্রস্তুতি নেয়। তারা দোকান থেকে হেক্সো ব্লেড, কস্টেপ ও ইয়াবা কিনে বাসায় ফিরে আসে। এরপর লাশের পাশেই তিনজন ইয়াবা সেবন করে নয়নের দেহ টুকরো করে ড্রামে ভরে রাখে।
পরে একটি অটোরিকশায় করে লাশটি ফতুল্লার দক্ষিণ শিয়াচর মাওয়া মার্কেট এলাকার পেছনের ঝোপে ফেলে রেখে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ ড্রামভর্তি টুকরো লাশ উদ্ধার করে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে।
এরপর পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, হত্যার পর লাশ গুমের পাশাপাশি আসামিরা লাশের পাশেই ইয়াবা সেবনে মেতে ছিল- যা পুলিশকে স্তম্ভিত করেছে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...