নারায়ণগঞ্জের কাগজ : পুরো জেলায় প্রায় ৩৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। আর প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিক নির্দেশনায় চলে রাজনৈতিক কর্মকান্ড। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার আদর্শের আওয়ামী লীগের রাজনীতি হলেও কেবল ব্যতিক্রম শুধুমাত্র কাশিপুর ইউনিয়নে। এখানে আওয়ামী লীগের বদলে চলছে বাদল লীগ। অর্থ্যাৎ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং তাদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার না হলে নিজের মনমত অনুপ্রবেশকারীদের দিয়েই চলছে আওয়ামী লীগের রাজনীতির হালচাল। অবৈধ টাকার জোড়ে বহিরাগতরা ওয়ার্ডে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ মুল্যবান পদে আসীন হলে দীর্ঘ দিন যাবত মাঠে থানা ত্যাগী নেতাকর্মীরা হচ্ছেন অবহেলিত।
কাশিপুর ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে এখনও সভাপতি হিসেবে রয়েছেন ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মোঃ দুলাল মিয়া। তিনি এখনও বেচে রয়েছেন কিন্তু তারস্থলে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্বে রয়েছে পরিবহন নেতা এম. সাইফুল্লাহ বাদলের ‘সোনার ডিম’ হিসেবে পরিচিত আইউব আলী। সংগঠনের গঠনতান্ত্রিক অনুযায়ী সভাপতি মারা গেলে কিংবা রাজনীতি থেকে সরে দাড়ালে সেক্ষেত্রে সহ-সভাপতিই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু কাশিপুর বাদল লীগেই চলছে ব্যতিক্রম।
আইউব আলী কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোন সাধারণ সদস্য পদও তার নেই। কিন্তু সাইফুল্লাহ বাদল তার প্রভাব খাটিয়ে ‘সোনার ডিম’ আইউব আলীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। গত ৩দিন আগে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের এক জরুরী সভা হয়েছিলো। সে সভায় ৫টি ইউনিয়নের ৫ জন সভাপতি ও ৫জন সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কাশিপুর ইউনিয়ন থেকে মূল সভাপতি দুলাল হোসেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থাপক দুলাল হোসেন বক্তব্য দেয়ার আহবান করলেও সাইফুল্লাহ বাদলের নির্দেশে সেখানে আইউব আলীকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেন কিন্তু মূল সভাপতিতে তিনি বক্তব্য দেয়া থেকে বঞ্চিত করেন। এ নিয়েও কাশিপুরের তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে ক্ষোভ।
বর্তমানে নতুন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যে কমিটি গঠনের চিন্তা করছে সেখানেও দলের ভেতরে যার কোন পদ-পদবী নেই সাইফুল্লাহ বাদলের ‘সোনার ডিম’ হিসেবে পরিচিত আইউব আলীকে সভাপতি এবং একই ওয়ার্ডের এমএ সাত্তারকে সাধারণ সম্পাদক বানানোর চিন্তা করছেন বাদল লীগের কর্ণধার এম. সাইফুল্লাহ বাদল।
এভাবেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়ার মহা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন বলে দাবী তৃণমুল নেতাকর্মীদের। প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কমিটিতে ত্যাগী ও নির্যাতিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর পরিবর্তে বিএনপির লোক দিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে ফুসে উঠেছে দীর্ঘদিন যাবত দলের সাথে থাকা নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি কাশিপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন সদস্য ফরম বিতরণ করা হয়েছে। আর এতে দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকা নেতাকর্মীরা অবহেলিত হয়েছেন এম. সাইফুল্লাহ বাদলের কারণে ৯টি ওয়ার্ডের বেশীরভাগ আওয়ামী লীগের নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের পরিবর্তে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ছাড়াও মূল্যবান পদে ঠাই পেয়েছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরা।
ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আহমেদ আলীকে দিয়েছেন। যিনি বিএনপির পরিচিত ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পুরো কাশিপুরে সর্বজন পরিচিত। এই আহমেদ আলী ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর উপর চালায় নির্যাতনের ষ্টীম রোলার এমনকি অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেয়।
৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন বিএনপির অতি পরিচিত নেতা আবদুর রশিদ পোকন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপির আরেক নেতা বিএনপির ক্যাডার হাসানের অন্যতম সহযোগি মোঃ নাসির।
৯নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন মোঃ হুমায়ূন কবীরকে যিনি দেওভোগ মাদ্রাসা এলাকার যুবদল ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ফরিদের আপন ভাই। হুমায়ূনের আরেকটি পরিচয় তিনি সাইফুল্লাহ বাদলের ভাই আমিরুল্লাহ রতনের মেয়ের উকিল বাবা।
এছাড়াও ২নং ওয়ার্ডে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন আরেক বিএনপি নেতা বদু ওরফে ডিস বদু। যিনি বিএনপির আরেক ক্যাডার হাসানের অন্যতম সেনাপতি সালাউদ্দিনের ভাই।
এছাড়াও জাতীয় পাটির অনেক নেতাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেয়া হয়েছে গুরুত্বপুর্ন পদ-পদবী। এ নিয়ে কাশিপুরে তৃণমুল নেতাদের মাঝে ক্রমেই বেড়ে চলছে ক্ষোভ। তারা বাদল লীগের অবসান দূর করে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা এবং নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের নেতা সাংসদ শামীম ওসমানের আওয়ামী লীগ চাই।
এ বিষয়ে কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ দুলাল হোসেন জানান, আমি এখনও সভাপতি পদে আছি কিন্তু চাপের কারণে সে দ্বায়িত্ব পালন করতে পারছিনা। বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে তো ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্যও ছিলেন না নেতার আর্শিবাদে তিনি এ পদে আসীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আইউব আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে জানতে না চেয়ে থানা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীর কাছে জানতে চাওয়াটাই ভাল। সভাপতি থাকাবস্থায় আমাকে কেন ভারপ্রাপ্ত দেয়া হলো সেটা তারা ভাল বলতে পারবেন। প্রায় ৭ বছর যাবত আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আছি কই এর আগে তো আর ফোন দিলেন না এখন কেন।
তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে কয়েকটি সম্মেলন করলাম কিন্তু সেখানে তো দুলাল সাহেবকে উপস্থিত দেখলাম না। তিনি তো আপনাদের না বলে সরাসরি চেয়ারম্যানকেই বলতে পারেন।
এ বিষয়ে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম. সাইফুল্লাহ বাদলের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেনি।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...