আড়াইহাজারে বাড়ির ছাদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া ১৬ বছর বয়সী মেয়ে সুরভিকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন মা রোজিনা বেগম (৩৫)। সুরভির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) এ ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেয়েটির দাদিও সামান্য আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে ]উপজেলার ব্রাহ্মনদী ইউনিয়নের ছোট বিনাইরচর এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। নিহত রোজিনা বেগম টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার কামাড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা আক্কাস আলীর ছেলে সোহেলের স্ত্রী। তারা ছোট বিনাইরচর এলাকার শফির বাড়িতে ভাড়া থাকত এবং স্বামীর সঙ্গে আড়াইহাজারে একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন রোজিনা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক মাস আগে সোহেল মিয়া তার পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কারণে বাড়িটির দোতলার ওপর দিয়ে বিদ্যুতের কভারবিহীন তার গিয়েছিল। বাড়ির মালিক বারবার স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে কভার তার বা বিকল্প সংযোগ দেওয়ার অনুরোধ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সুরভী মোবাইলে টিকটক ভিডিও ধারণ করতে দোতলায় ওঠে। অসাবধানতাবশত তার কপাল ওই খোলা বিদ্যুতের তারে স্পর্শ করলে সে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে মা রোজিনা ও দাদি মাসুদা বেগম (৬০) ছুটে যান। এতে তিনজনই বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন।
তাৎক্ষণিকভাবে স্বজন ও এলাকাবাসী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট তিনজনকে উদ্ধার করে দ্রুত আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোজিনা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, সুরভির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) প্রেরণ করা হয়।
আড়াইহাজার থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনচার্জ) খন্দকার নাসির উদ্দিন ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে এক নারী মারা গেছেন এবং দুই নারী আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আড়াইহাজার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার টি. এম. মেসবাহ উদ্দীন জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ অফিস থেকে একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, যখন ওই ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল, তখন ভবনটি ছিল একতলা। পরবর্তীতে ভবন সম্প্রসারণের ফলে তারের দূরত্ব কমে গেছে। ওই এলাকায় বড় খুঁটি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবেশিদের আপত্তির কারণে এক পাশে খুঁটি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে নতুন খুঁটি বসানো হবে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...